স্মার্ট থাকুন; স্মার্টফোন ব্যবহারে সর্তকতা প্রয়োজন।


ডিজিটাল
যুগে, স্মার্টফোন ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এর সুবিধা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে অসুবিধাও। স্মার্টফোনের সাথে ইন্টারনেট সংযোগে এটি আমাদের গ্লোবাল ভিলেজে যুক্ত করেছে। সারাবিশ্ব যেন এক বড়ো গ্রাম, সেখানে সবই থাকে চোখের সামনে। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে তাৎক্ষণিক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অনায়েসে জানা সম্ভব এই স্মার্টফোনের মাধ্যমে। তথ্য প্রযু্ক্তির ক্রমাগত উন্নয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) জীবনের গতি বৃদ্ধি করেছে। এ উন্নয়ন জীবন সহজ করলেও ঝুঁকিও বাড়িয়েছে।  প্রতিনিয়ত ফিশিং অ্যাপ্লিকেশন, এবং অন্যান্য সাইবারসিকিউরিটির হুমকিরমুখে আমরা ধাবিত হচ্ছি।

স্মার্টফোন ব্যবহার করেন কিন্তু অ্যাপস ব্যবহার করেন না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলো যে মাধ্যম থেকেই আসুক তাতে ঝুঁকির একটা সম্ভাবনা রয়েই যায়। ছোট্ট একটা ঘটনা বলি, ধরুন আপনি ফোনের সামনে কোন কিছু নেয়ার আগ্রহের কথা উচ্চারণ করলেন বা ব্র্যাউজারে টাইপ করলেন তাহলে দেখবেন সে সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন আপনাকে দেখানো হচ্ছে। কারণ? অ্যাপস এবং তার পারমিশন। এ ঘটনা আমাদের সাথে প্রতিনিয়তই হয়েই চলেছে।

আমরা অ্যাপস এর কার্যকারিতা সম্পর্কে অ্যাড দেখছি আর ইন্সটল করে নিচ্ছি; দিয়ে দিচ্ছি হাজারটা পারমিশন। যাতে, আমাদের ব্যক্তিগত ডেটা চুরি হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে। শুধু ডেটা চুরিই নয় অথোরাইজড মাধ্যম ছাড়া অ্যাপস ব্যবহার আপনার ফোনকে ঘরের শত্রু বিভীষণ করে তুলতে পারে। যাতে আপনার ফোনের সেভ করা নম্বর, পাসওয়ার্ড, ক্যামেরা অ্যাক্সেস,মাইক্রোফোনসহ আপনার লাইভ লোকেশন সব তথ্যই বেহাত হয়ে যেতে পারে। 

আমাদের মধ্যে ফেসবুক অ্যাপসসহ সোস্যাল মেসেজিং অ্যাপসগুলোতে প্রায়শই লিংক শেয়ার করার একটা প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। আপনি হয়তো ভুলে একটা ফিশিং বা স্পামিং লিংকে ক্লিক করেছেন। যারফলে আপনার প্রোফাইলের নিয়ন্ত্রণসহ সকল চ্যাট হিস্ট্রি চলে যেতে পারে স্প্যামার বা হ্যাকারদের কাছে।

স্মার্টফোন বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের কাজ সহজ করলেও এর কিছু ফাঁকফোকরও আছে। যা একজন মানুষের জীবনকে দূর্বিসহ করে তুলতে পারে। এআই এর ব্যবহারে শুধুমাত্র আপনার ভয়েসের সামান্য কিছু অংশদিয়ে পুরো আপনার মতো ভয়েস তৈরী সম্ভব হচ্ছে। সেই সাথে আপনার ছোট্ট একটু ভিডিও ফুটেজ বা ছবি দিয়েই তৈরী করা সম্ভব হচ্ছে পুরো ইন্টারঅ্যাক্টিভ ভিডিও। যা প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া ধরা অসম্ভব। এই পদ্ধতিকে বলে এআই ডিপফেক ভিডিও এবং অডিও।  যা বিভ্রান্তিকর বা ক্ষতিকারকও বটে। যা ব্যক্তিগত খ্যাতি এবং সুরক্ষার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এমন যদি হয়, আপনার অবস্থান কেউ প্রতিনিয়ত ট্র্যাক করছে বা কেউ আপডেট পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিষয়টা কতটা সাংঘাতিক বুঝতে পারছেন? আপনি হয়তো জানেনই না কিন্তু আপনার ফোনে থাকা অসংখ্য অ্যাপস প্রতিনিয়ত এই কাজ করে যাচ্ছে আপনার অগোচরে। অনেক অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারকারীদের অবস্থান ট্র্যাক করে, কখনও কখনও সুস্পষ্ট সম্মতি ছাড়াই তাই অ্যাপস পারমিশন এর ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।


বর্তমানে স্মাটফোন
ব্যবহার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আসক্তির পর্যায়ে চলে গেছে। যা মানসিক এবং শারিরীক স্বাস্থ্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। একজন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর জীবন যাত্রায়, অনিয়মিত খাদ্যগ্রহন থেকে গভীররাত পর্যন্ত বিনিন্দ্র কাটানোর প্রভাব, নিজেদের দিকে খেয়াল করলেই বোঝা যায়। দীর্ঘসময় ধরে নিয়মিত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে চোখের চাপ, স্নায়ুবিক চাপসহ নানা শারীরিক প্রভাব পরে।

আচ্ছা, এতো যে সমস্যা কিন্তু স্মার্টফোন ব্যবহার তো বন্ধ করা যাবে না!  উপায় কি এর থেকে বাঁচার? উপাই নিজের কাছেই। এর থেকে বাঁচতে, আমাদের সচেতনতা প্রয়োজন, স্মার্টফোনের অ্যাপ্লিকেশন গুলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে। সেইসাথে অ্যাপস ইন্সটলের সময় কি কি পারমিশন দিচ্ছি সেটা সচেতনভাবে বুঝতে হবে। অ্যাপস এর অফিসিয়াল সোর্স ছাড়া অ্যাপস ব্যবহার করা যাবে না।  

তাছাড়াও শারীরিক,মানসিক বিপর্যয় রোধ করতে স্ক্রিন টাইম সীমাবদ্ধ করা উচিত। স্মার্টফোন প্রয়োজন কিন্তু তা যেনো আসক্তির পর্যায়ে না চলে যায়। তাই স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য সীমারেখা ঠিক করতে হবে। জীবনধারায় ভারসাম্য বজায় রাখতে অফলাইন ক্রিয়াকলাপে যুক্ত হওয়া যেতে পারে।

আপনার স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলি আপডেট রাখতে হবে তাতে ডেটাবেইজ সুরক্ষিত এবং সক্রিয় থাকবে। মোবাইলে বিভিন্ন অ্যাপস বা সাইটের জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, সম্ভব হলে Two Factor সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে।  ফিশি অ্যাপ্লিকেশন, এআই এবং অন্যান্য হুমকির বিপদগুলো সম্পর্কে আমাদের আপডেট থাকতে হবে। আমাদের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষার জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হবে নিরাপদ এবং সচেতনভাবে। মনে রাখতে হবে, এই  যুগে সচেতনতা ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার একটি শক্তিশালী সরঞ্জাম 


-আরমান হোসেন

পিআর, ব্র্যান্ডিং এন্ড ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট

Email:lead@iedgtl.com Web: www.iedgtl.com