হিজরা/ট্রানজেন্ডার কি শুধূই বিড়ম্বনা নাকি সম্ভাবনা? - Arman Hossain
হিজরা(৩য় লিঙ্গ) বা ট্রানজেন্ডার যাই বলি না ক্যানো যার যার অবস্থান থেকে স্মৃতি গুলো একটু অস্বস্তির বেশি। এখানে ব্যক্তি মানসিকতা পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র যার দোষ বা দায় দিই না ক্যানো, দায়টা আমাদের কাঁধে ও আসে।
নাগরিক হওয়া সুনাগরিক বা দেশের অর্থনীতি বা উন্নয়নে কাজ
করার জন্য কি লাগে? সুস্থ ও পরিপূর্ণ শুধু ছেলে বা মেয়েই এই কাজগুলো করতে পারেন বা
পারবেন ? নাকি সাধারণ মানুষদের চেয়ে হুইল চেয়ারে বসা স্টিভেন
উইলিয়াম হকিংরা
সমাজের জন্য ভাবতে বা করতে
পারেননি/পারবেন না।
যদি শারীরিক পারঙ্গমতা আপনার দক্ষতা নির্ধারণ করতে না পারে তাহলে লৈঙ্গিক বৈষম্য ক্যানো এতো গুরুত্ববহ!? ধরুন, রাস্তা মেরামত
করার একটা কাজ। সেখানে লৈঙ্গিক বৈষম্য ক্যানো
থাকবে? প্রধান বিবেচ্য হওয়া উচিত কায়িক পরিশ্রমের সক্ষমতা এবং সুযোগ।
বাংলাদেশ সরকার হিজরাদের “তৃতীয় লিঙ্গ” স্বীকৃতি দিলেও এ জনগোষ্ঠীর বিড়ম্বনার
শেষ নেই। নেই কোন উত্তরাধিকার আইন সেই সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজস্ব লিঙ্গ পরিচয় উল্লেখ করতে পারেন না। যদিও তা করার সুযোগ থাকে বা
দেয়া হয় তার জন্য লড়াই করতে হয় জনে জনে।
বর্তমান
দেশের সমাজ ব্যবস্থা গোঁড়ামি আগলেই বেঁচে এসেছে। তাই রাষ্ট্র বা দেশের আগে সমাজ চোখ,
কান আর মুখ বন্ধ করে রেখেছে। যাতে নাকে নিশ্বাসের ফুটোটা থাকলে দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলার
অধিকার নেই।
ঢাকার রাজপথে পাবলিক পরিবহনে প্রতিদিন হিজরারা বা হিজরা
সেজে রীতিমত চাঁদাবাজি চলে। কেউ টাকা দিতে না সম্মত হলে অকথ্য আচরণ/ অশ্রাব্য কথায়
বিষিয়ে তোলা হয় পরিবেশ। আর কেউ তার কোন উত্তরও করতে পারেন না। ঘটনা ঘটার পর আসামীর
প্রস্থান হলেই একমাত্র প্রতিবাদী চরিত্রগুলো গুল মারতে শুরু করে। এ গজগজানি চলে পাশের
বসা সিটে বসা মানুষটিকে উদ্দেশ্য করে।
এরপর কি? চরম ঘৃণায় বাসের সীটে সেঁটে থাকা। সমাধান কারোর
জানা নেই। কখনও সমাধান হয়ও না। হয়ওনি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বারবারই প্রতিবাদ হচ্ছে
খুবই ক্ষীণস্বরে। সাফল্যের সংখ্যাটাও অনেক নগণ্য।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে
মানতে সমাজের অনেক কষ্ট কেননা সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তাদের অবস্থান নেই। কিন্তু নির্বাচিত
অবস্থান তো মানতেই হবে। আর যখন তারা দেশের নাগরিক।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হয়তো দৃষ্টান্ত তৈরী হচ্ছে। সেদিক
থেকে তাসনুভা আনান শিশির
এক অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরী করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার টিভি সংবাদ পাঠক। বেসরকারি চ্যানেল বৈশাখী টিভিতে সংবাদ পাঠক হিসেবে কাজ
শুরু করার মাধ্যমে এক অনন্য প্রতিবাদ এবং অনুপ্রেরণার আলোড়ন হয়েছে।
তাসনুভা কৈশোরে বিদ্বেষ, ঘৃণা, হয়রানির শিকার হয়েছেন, বাধ্য হয়েছেন পরিবার ছেড়ে দূরে থেকেছেন। শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন, কাজ করেছেন থিয়েটারে। তার এই অর্জন বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির বাস্তবতা পরিবর্তন করবে বলে বিশ্বাস তাসনুভার।
হোক না এমন প্রতিবাদ, জাগুক প্রাণ। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
পথে পথে বৈষম্য দূর হোক। প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মানুষের জয় হোক, মনুষ্যত্বের জয় হোক।
স্বীকৃতি
২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর পর ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রকাশিত হয় হিজড়াদের লিঙ্গ পরিচয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট।
-আরমান হোসেন
পিআর, ব্র্যান্ড এন্ড কমিউনিকেশন প্রফেশনাল
লাইফ মেম্বার, বাংলাদেশ পিআর অ্যাসোসিয়েশন
Email:
armanhs993@gmail.com
Website:
www.armanhossain.net

Post a Comment