জব রেফারে প্রার্থী যাচাই আবশ্যক! - Arman Hossain

জব রেফারে প্রার্থী যাচাই আবশ্যক!


আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বা দেশের প্রেক্ষাপটে চাকুরীর পেছনে দৌড়ানো মানুষের সংখ্যা বেশি। সেই হিসেবে সবার সচেতনতার লেভেলও ভালো হওয়া উচিত। কিন্তু এ দেশে ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতনতার বড্ড অভাব। অনেকেই মনে করেন শুধু বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে লেখাপড়া করলেই হবে। তাতেই উদ্ধার হবে সাত রাজার ধন মানিক রতন। মানে গ্রাজুয়েশন এর সার্টিফিকেট হাতে পেলেই হবে। অনেকেই তো আত্মীয় স্বজনের দম্ভেই বাঁচেন না। 

একটা গল্প বলি,  আমার এক পরিচিত। অনার্স  শেষ করে লোকাল একটি এনজিওতে জয়েন করে। দু-তিনমাস কাজ করবার পর মনে হয় একাজ আমার দ্বারা সম্ভব নয়। তারপর তিনি এক প্রভাবশালী আত্মীয়ের রেফারেন্সে জয়েন করে একটি বিমান কোম্পানিতে এডমিন সহকারী হিসেবে [তার ভাষ্যমতে] সেখানে ৪ মাস কাজ করবার পর তিনি আরে আত্মীয়ের মুখে শুনলেন, “ আরে এসব কি করতেছে সে, ব্যাংকের জবের চেয়ে ভালো কি কোন জব আছে।” পরে সে আবার জয়েন করলো একটা ব্যাংকের কার্ড সেকশনে। 

এভাবে তার এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তিনটি জব সুইচ করা হলো। আমি জানতে চেয়েছিলাম, কি চাইছেন? লক্ষ্য কি? এভাবে চাকুরী সুইচ করলে কি ক্যারিয়ার ব্র্যাকগ্রাউন্ড তৈরী হবে। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আমার কিছুই করার নেই পরিবারের সিদ্ধান্ত!!”

ধরুন, যার উদাহরণ দিলাম। তিনি যে সুবিধাগুলো পেয়েছেন তাতে কিন্তু একটা ক্যারিয়ারের স্ট্রং ব্র্যাকগ্রাউন্ড তৈরী হতে পারতো, যদি তিনি একটা লক্ষ্যে অন্তত এগিয়ে যেতেন। যদি একটা জবে অন্তত একবছর কন্টিনিউ করতেন তাহলেও সেটা উল্লেখ করার মতো হতো। 

আবার যে সুযোগ গুলো তিনি নষ্ট করেছেন, সেগুলোতে তিনি ফিরতে পারবেন না। যিনি রেফার করলেন তার সম্মানহানিও হলো।

তাহলে ভাবুন, আমরা কাকে জবের জন্য রেফার করবো? যে কিনা নিজের সম্পর্কেই জানেন না। ক্যারিয়ারের কোন লক্ষ্যমাত্রা নেই। নিজস্ব কোন যোগ্যতা নেই। নিজের কথাগুলো উপস্থাপন করতে অন্যের হেল্প নিতে হয়! সাহস যোগাতে সাথে থাকতে হয় হয় এমন কাউকে?

একটা বয়সপর সবাইকেই সাবলম্বী হতে হয়। সাবলম্বী অ্যাক্ট করা হয় সত্যিকারেই ভাবতে পারা, বুঝতে পারার দরকার হয় বাস্তবতাকে। সবসময় আত্মীয়দের সহযোগিতা নাও থাকতে পারে। আবার বলা যেতে পারে সবসময় সবকিছু আশা করাও পরিণত মানুষের লক্ষণ নয়। 

বলুন, আমাদের দেশের একজন মাস্টার্স শেষ করা ছেলেটা ক্যানো কথা বলতে আটকে যাবে? তাহলে কি শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবমুখী নয়। কি শেখাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা? যে কারণে মাতৃভাষাতে কথা বলতেও সমস্যা হয়। যাতে ছোট্ট আচরণগুলোতেও আমরা ভদ্রতার পরিচয় দিতে পারি না। 

অন্যান্য দেশে প্রাক প্রাথমিকে মতো লেভেলে ম্যানার, এটিকেট, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বদেশপ্রেম এসব গুরুত্বের সাথে শিক্ষা দেয়া হয়। আবার, খুব বেশি বছরের কথা নয়। জেনেছিলাম, একটি দেশে কর্মের সংস্থানের চেয়ে গ্রাজুয়েটদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় দেশটি একটি সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে নতুন গ্রাজুয়েট হওয়া সিস্টেম বন্ধ করে বাধ্যতামূলকভাবে কর্মমুখী শিক্ষা/কারিগরি শিক্ষার প্রতি জোর দেয়া হয়। যাতে ফলও পেয়েছে সেই দেশ।

আমাদের উচিত শুধু “স্টেজে মারবো” স্বভাব নিয়ে নিজের সর্বনাশ না করে প্রস্তুত হওয়া। আমাদের দেশে আমরা চাই ঠিকই কিন্তু প্রস্তুতি বলে যে একটা কথা আছে সেটা মাথাতেই থাকে না। এদেশে সরকারি জবে যারা যোগ দিতে চান তাদের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নিতে হবে। 

কিন্তু যদি কেউ প্রাইভেট সেক্টরে জব করতে হয় তাহলে কি প্রস্তুতি লাগবে না? অবশ্যই লাগবে,  নিজের স্কিল ফোকাস করুন। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতা রাখুন। 

যারা রেফার করছেন তারা নিজেদের সম্মান বিবেচনায় চাকুরী প্রার্থীর স্কিল যাচাই করুন। প্রয়োজনে দক্ষতা অর্জনে বিভিন্ন কোর্সের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।

তাছাড়া অবোলা, অনড়া যে কাউকেই কর্পোরেটে ঠেলে দিলে সমূহ বিপদ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত থাকুন। আপনার দূর্নাম অনিবার্য। উচিত হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সময় থাকতেই পথটা বোঝানো আর দক্ষতা কতোটা জরুরী সেটা জানানো। না হলে আগামীর প্রজন্মকে অলসতা আর অদক্ষতা সাথে অহমিকার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।

-আরমান হোসেন, পিআর, ব্র্যান্ড এন্ড কমিউনিকেশন প্রফেশনাল